মো.আবুল বশর নয়ন:
সাদা সোনা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ ইউনিয়ন বাইশারীকে উপজেলা ঘোষনার দাবী দিন দিন আরো জোরালো হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে বাইশারী ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ড বিভক্ত করে নতুন ইউনিয়ন করার প্রক্রিয়া চলে আসলেও এবার নতুন করে যোগ হয়েছে উপজেলা ঘোষনার দাবী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে তৎপর হয়ে উঠেছে সর্বস্থরের মানুষ। তবে কেউ কেউ উপজেলা দাবী করলেও অনেকে আবার পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক থানায় রূপান্তরিত করার দাবী জানিয়েছেন।

স্থানীয় সাংবাদিক আবদুল হামিদ তার ফেইসবুক ষ্ট্যটাসে লিখেছেন- ইতিহাস সাক্ষী। বাইশারী পুর্নাঙ্গ থানা ছিল কি না। বাংলাদেশ মানচিত্র দেখলেই সহজেই বুঝা ষাবে। এখন শুধু সরকার মহোদয় সু-দৃষ্টি দিলেই বাইশারী উপজেলা হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এডভোকেট আবু তালেব লিখেছেন ‘বাইশারীকে উপজেলা চাই’, সাংবাদিক মুফিজুর রহমান জানিয়েছেন- বাইশারীকে উপজেলা নয় বরং পূর্ণাঙ্গ থানা পূনরায় ঘোষনা চাই। এখনো বাইশারী থানা হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু কার্যক্রম নেই। পূর্নাঙ্গ থানা ঘোষনা হলে পর্যায়ক্রমে বাইশারী একদিন উপজেলা হবেই ইনশাল্লাহ। আহসানউল্লাহ লিখেছেন- অর্থনৈতিক উন্নয়নশীল একটি জনবহুল ও বৃহৎ ইউনিয়ন বাইশারী কে উপজেলা ঘোষণা করা হউক, আওয়ামীলীগ নেতা মংথোয়াই চাক, সমাজ সেবক মোহাম্মদ রফিক, সাংবাদিক আবদুর রশিদ, যুবলীগ নেতা নুরুল কবির রাশেদ, কলিম উল্লাহ, হাবিব নওশাদ, সৈয়দ মোহাম্মদুল হাসান, প্রবাসী আমিরুজ্জামানসহ শত শত বাসিন্দা নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা দাবী করে ষ্ট্যাটাস লিখেছেন।

জানা গেছে, ১৯৬৮সালে তৎকালীন র্প্বু পাকিস্তান আমলে ৪৬৩.৬১ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে বাইশারী ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন হেডম্যান অংখ্যই চাক। বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন মোহাম্মদ আলম। বাইশারী ইউনিয়নটির উৎপত্তি নিয়ে তেমন কোন ইতিহাসগত উৎস পাওয়া না গেলেও এলাকার প্রবীন মুরব্বিদের কাছ থেকে জানা যায়, এক সময় এক টাকায় ২২ আড়ি ধান পাওয়া যেত অথবা একটি খুয়ার পানি শুকিয়ে মাছ ধরার সময় ২২ আড়ি মাছ পাওয়া যায়। আর কারো মতে, একজন ব্যক্তির ২২ কানি জমি ছিল তাকে সবাই বাইশ্যা বলে ডাকত। বাইশ্যা থেকেই বাইশারী শব্দের উৎপত্তি। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে রামুর কচ্ছপিয়া গর্জনিয়া হয়ে বাইশারী ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ১২কি:মি। এছাড়াও কক্সবাজারের ঈদগাও থেকে এই ইউনিয়নের দূরত্ব ২০কি:মি। ইউনিয়নটির উত্তরে লামা উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়ন, দক্ষিনে রামু উপজেলার গজনিয়াা ইউনিয়ন, পশ্চিমে রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়ন ও পূর্বে মায়ানমার।

বাইশারী ইউনিয়নে স্বাক্ষরতার হার ২৩.২১। অংখ্যাই চাক, মরহুম নুরুল হক চেয়ারম্যান, মরহুম মাষ্টার ইসহাক, মরহুম মাষ্টার ইলিয়াছ, জালাল আহাম্মদ চেয়ারম্যান, মরহুম হাজি বশির আহাম্মদ, মরহুম আলী আহাম্মদ ডিলার, মাষ্টার মীম সালেহ আহাম্মদ, মরহুম আলী আহাম্মদ, জলিলুর রহমান বাইশারী ইউনিয়নে শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন।

চারটি মৌজা, একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, আলীক্ষ্যং ও কাগজীখোলা দুটি পুলিশ ক্যাম্প, একটি কৃষি ব্যাংক, একটি খাদ্য গোদাম, ৬৮টি গ্রাম এবং ভূমির পরিমাণ ৩২শ একর। নিবন্ধিত জম্মনিবন্ধন মতে ইউনিয়নে ২৪ হাজার ৩৮৩ এবং জনসংখ্যা প্রায় ৩৫হাজার। ইউনিয়নে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি নিম্ম মাধ্যমিক, একটি দাখিল মাদরাসা, জুনিয়র দাখিল মাদরাসা দুটি, এবতেদায়ী চারটি, সরকারী প্রাইমারী ১৩টি এবং বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে তিনটি।

আন্দোলনে সক্রিয় জনগণের মতে, বাইশারী উপজেলায় রূপান্তরিত হলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্নিত্ব হবে। আগামী দিনগুলিতে বাইশারীকে উপজেলা বাস্তবায়নের আন্দোলন আরো জোরদার করার ঘোষনাও দেন তারা।